Passport

বাংলাদেশে কত ধরণের পাসপোর্ট আছে?

বাংলাদেশে কত ধরণের পাসপোর্ট আছে? বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরণের পাসপোর্ট হয়। যথাক্রমে লাল, নীল ও সবুজ মলাটের। বাংলাদেশে সাধারণভাবে সকলের জন্য সবুজ রং এর পাসপোর্ট চালু থাকলেও, দেশে আরো দুটি রং অর্থাৎ নীল এবং লাল পাসপোর্ট চালু রয়েছে। লাল মলাট হচ্ছে, কূটনৈতিক পাসপোর্ট। নীল মলাট হচ্ছে, সরকারি কর্মজীবীদের জন্য অফিসিয়াল পাসপোর্ট। অপরদিকে সবুজ মলাটের পাসপোর্ট হচ্ছে সর্ব সাধারণের জন্য।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ ও বিশ্বের ১২০ তম দেশ হিসেবে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের যাত্রা শুরু হয়। ই-পাসপোর্ট চালুর আগের থেকেই তিন রঙের পাসপোর্ট চালু আছে বাংলাদেশে। আসুন জেনে নেই, বাংলাদেশে কোন রঙ এর পাসপোর্ট কাদের জন্য!

বাংলাদেশে কত ধরনের পাসপোর্ট আছে?

বাংলাদেশে মূলত তিন রঙের পাসপোর্ট চালু আছে। এই তিনটি রঙ ভিন্ন ধরন ও ব্যবহার নির্দেশকারী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

প্রথমে পাসপোর্ট ছিল তিন ধরনের। অর্ডিনারি বা সাধারণ পাসপোর্ট, স্পেশাল বা বিশেষ পাসপোর্ট এবং ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। বিশেষ পাসপোর্ট কেবলমাত্র ভারতে যাবার জন্য ইস্যু করা হতো বলে সেটি ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট নামেও পরিচিত ছিল।

বাংলাদেশে কোন রঙের পাসপোর্ট কাদের জন্য
বাংলাদেশে কোন রঙের পাসপোর্ট কাদের জন্য?

২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি সাধারণ পাসপোর্টের রঙ ছিল সবুজ, আর কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল লাল রঙের। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান পাসপোর্টের রঙও ছিল লাল। তবে সেটি কূটনৈতিক পাসপোর্টের চেয়ে কিছুটা আলাদা রঙের। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব পাসপোর্ট হাতে লেখা ছিল।

২০১০ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন এর নির্দেশনা অনুযায়ী এমআরপি পাসপোর্ট চালু করা হয়। এর ফলে, বাংলাদেশ-ভারত বিশেষ পাসপোর্ট বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে, ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারী পাসপোর্ট চালু হয়।

পাসপোর্টের যত রঙ

বাংলাদেশ সরকার তিনটি বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করে। এগুলি হল কূটনৈতিক, দাপ্তরিক এবং নিয়মিত বা সাধারণ পাসপোর্ট।

     সাধারণ পাসপোর্ট: এটা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের সাধারণ নিয়মিত নাগরিকদের জন্য জারি করা হয়। যেমন: চিকিৎসা, ছুটি, অধ্যয়ন, ব্যবসা, ভ্রমণ ইত্যাদি।

     দাপ্তরিক পাসপোর্ট: সরকারী কর্মচারী, সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারী ব্যবসায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের জারি করা হয়েছে।

     কূটনৈতিক পাসপোর্ট: বাংলাদেশি কূটনীতিকদের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক কুরিয়ার জারি করা হয়।

     বিশেষ পাসপোর্ট: এটি ভারত-বাংলাদেশ বিশেষ পাসপোর্ট নামেও পরিচিত ছিলো! যা বাংলাদেশী নাগরিক এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জারি করা হয়েছিল। মূলত, এটি শুধুমাত্র ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভ্রমণের জন্য বৈধ ছিল। পরবর্তীতে ICAO এর নিয়ম পরিবর্তনের কারণে এই পাসপোর্টের ইস্যু ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

কোন রঙের পাসপোর্ট কার জন্য?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু যে দেশ যে রঙ এরই পাসপোর্ট দিক না কেন, সেটি অবশ্যই ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাওর কাছ থেকে পাসপোর্ট এর রঙের আর নকশার ছাড়পত্র নিতে হয়।

তবে সাধারণভাবে পৃথিবীতে লাল, নীল, সবুজ ও কালো এই চারটি রং এর ভিন্ন ভিন্ন ডের হয়। বাংলাদেশে সাধারণভাবে সকলের জন্য সবুজ রং এর পাসপোর্ট চালু থাকলেও, দেশে আরো দুটি রং অর্থাৎ নীল এবং লাল পাসপোর্ট চালু রয়েছে। কাদের জন্য কোন রঙ এর পাসপোর্ট? চলুন জেনে নেওয়া যাক!

সবুজ পাসপোর্ট

সবুজ রঙের পাসপোর্টকে বলা হয় অর্ডিনারি বা সাধারণ পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট হচ্ছে বাংলাদেশের সকল সাধারণ নাগরিকদের জন্য। জন্ম ও বৈবাহিক উভয় সূত্রে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য সবুজ পাসপোর্ট প্রযোজ্য। এই রঙের পাসপোর্টে বিদেশে গমনের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসার প্রয়োজন হয়।

Bangladeshi E Passport
Bangladeshi E Passport

প্রশ্ন আসতে পারে, সাধারণ পাসপোর্টের রং সবুজ কেন, এই প্রশ্নের কয়েক রকম উত্তরের কথা জানা যায়। কোন একটি কারণ এখানে প্রতিষ্ঠিত নয়। বাংলাদেশের সাধারণ পাসপোর্টের রং সবুজ কেন, এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, অধিকাংশ মুসলিম দেশের পাসপোর্টের রং সবুজ থাকে, এই কারণে বাংলাদেশের পাসপোর্টের রংও সবুজ। আরেকটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, বাংলাদেশের পতাকার রং এর সঙ্গে মিলিয়ে আইকাও এর তালিকা থেকে সবুজ রং বেছে নেয়া হয়েছে।

নীল পাসপোর্ট

নীল রং এর পাসপোর্টকে বলা হয় অফিসিয়াল পাসপোর্ট। সরকারি কাজে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে হলে এই অফিসিয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়। এই পাসপোর্ট করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমোদন বা গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) প্রয়োজন হয়। এই নীল পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা অন্তত ২৭টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে পারবেন।

Bangladeshi Official Passport
Bangladeshi Official Passport

২০১০ সালের আগে এই নীল পাসপোর্ট বা সরকারি পাসপোর্ট ছিলো না। তখন পর্যন্ত সবুজ পাসপোর্টের মধ্যেই হাতে লিখে সরকারি অনুমোদন দেয়া হতো।

লাল পাসপোর্ট

লাল পাসপোর্টকে বলা হয় ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট পাবেন রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য এবং তাদের স্পাউস অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী।

সেই সঙ্গে উচ্চতর আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারা লাল পাসপোর্ট পান।

Bangladeshi Diplomatic Passport
Bangladeshi Diplomatic Passport

লাল পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য কোনো ভিসা প্রয়োজন হয় না। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে অবতরণের পর অন-অ্যারাইভাল ভিসা পান।

এছাড়াও, পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা ও অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) মিশনে পোস্টিংয়ের সময় লাল পাসপোর্ট পেয়ে থাকে। ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট সব দেশেই লাল রং এর হয়ে থাকে।

বিশেষ পাসপোর্ট

এটি ভারত-বাংলাদেশ বিশেষ পাসপোর্ট নামেও পরিচিত ছিলো! যা বাংলাদেশী নাগরিক এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জারি করা হয়েছিল। মূলত, এটি শুধুমাত্র ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভ্রমণের জন্য বৈধ ছিল। পরবর্তীতে ICAO এর নিয়ম পরিবর্তনের কারণে এই পাসপোর্টের ইস্যু ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়।

India Bangladesh Special Passport
India Bangladesh Special Passport

আশা করি, বাংলাদেশে কত ধরনের পাসপোর্ট আছে, পাসপোর্টের কত ধরণের রঙ, বাংলাদেশের পাসপোর্টের রং সবুজ কেন ইত্যাদি বিষয় আপনি জানতে পেরেছেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা, যুগান্তর, উইকিপিডিয়া।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Index